কম্পিউটারজনিত চক্ষু সমস্যা
যারা দীর্ঘ
সময় কম্পিউটার মনিটরে কাজ করেন, তারা বিভিন্ন চক্ষু সমস্যায় ভোগেন। কম্পিউটার
ব্যবহারকারীরা যে দৃষ্টি সমস্যা ও অন্যান্য চক্ষু সমস্যায় ভোগেন সেগুলোকে একত্রে
কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম বলে।
কম্পিউটারজনিত চক্ষু সমস্যাগুলো হলো:
দৃষ্টি
স্বল্পতা, চোখ জ্বালা-পোড়া করা, চোখ ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা ও চোখে আলো
অসহ্য লাগা। কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের অনেকেই বিভিন্ন চক্ষু সমস্যায় ভোগেন।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতকরা ২৫ থেকে ৯৩ ভাগ
বিভিন্ন চক্ষু সমস্যায় ভোগেন।
স্বাভাবিকভাবে মিনিটে ১৮ বার চোখের পলক পড়ে। কিন্তু কম্পিউটার
ব্যবহারকারীদের মিনিটে মাত্র ৪-৫ বার পলক পড়ে। ফলে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের চোখের
পানি ঠিকমত চোখের উপরিভাগে কর্ণিয়া ও কনজাংটিভাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। চোখের পানি
দ্রুত বাষ্পীভূত হয়। এতে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে চোখ জ্বালা-পোড়া করে ও চোখে ব্যথা
হয়।
কখনো কখনো চোখের কর্ণিয়াতে প্রদাহ হয়। অনেকক্ষণ ঘাড় প্রসারিত
করে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকলে ঘাড়ের মাংসপেশী সংকুচিত হয়। এতে ঘাড় ও মাথা
ব্যথা করে। কম্পিউটার মনিটর সাধারণত
একটু উঁচুতে স্থাপন করা হয়। কম্পিউটার মনিটর বেশী উঁচুতে
স্থাপন করলে গেজ অ্যাঙ্গেল বেড়ে যায়। আদর্শ গেজ অ্যাঙ্গেল ১০ থেকে ২০ ডিগ্রী হওয়া
উচিত।
বেশী উঁচুতে
কম্পিউটার মনিটর স্থাপন করলে চোখকে অনবরত জোর করে খোলা রাখতে হয়। এতে চোখ শুষ্ক
হয়ে যায়। বেশী উঁচুতে কম্পিউটার মনিটর স্থাপন করলে মাথা উঁচু ও কাত করে তা দেখতে
হয়। এতে মাথা, ঘাড় ও চোখ ব্যথা হতে পারে।
চিকিত্সা
দৃষ্টি স্বল্পতা থাকলে চক্ষু পরীক্ষা করে চশমা ব্যবহার করতে
হবে। অনেকক্ষণ একটানা কম্পিউটার ব্যবহার করা উচিত নয়। চোখ ও চোখের মাংসপেশীকে
বিশ্রাম দিতে হবে। এজন্য নিয়মিত চোখের পলক ফেলতে হবে এবং মাঝে মাঝে দূরের কোন
জিনিস বা আকাশের দিকে তাকাতে হবে। ২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রতি ২০
মিনিট অন্তর ২০ ফুট দূরের কোন জিনিসের দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকতে হবে। প্রতি ৩০
মিনিট অন্তর ২০ সেকেন্ডের জন্য জন্য চোখ বন্ধ রাখলেও একই রকম ফল পাওয়া যায়। বেশী
উঁচুতে কম্পিউটার মনিটর স্থাপন করা উচিত নয়। কম্পিউটার মনিটর এমনভাবে স্থাপন করতে
হবে যাতে মনিটরের উপরিভাগ ও চোখ একই সমতলে থাকে। চোখের শুষ্কতা দূর করার জন্য
কৃত্রিম চোখের পানি বা আর্টিফিসিয়াল টিয়ার ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
অধ্যাপক ডা.
চন্দ্র শেখর মজুমদার, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
চক্ষু বিভাগ,
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
0 comments:
Post a Comment